বিদ্যুৎ কী? বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কী কী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?
বিদুৎ কী? এর উত্তর এক কথায় দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এর উত্তর দিতে গেলে বিস্তারিত আলোচনা বাবেই নয়। তবুও কেউ যদি নাছোড়বান্দা হয়, তবে এক বাক্যে বলা যায় যে,
বিদ্যুৎ এমন এক অদৃশ্য বল বা শক্তি যা আলো, তাপ, শব্দ, গতি উৎপন্ন করে এবং অসংখ্য বাস্তব কাজ সমাধা করে। বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটির উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ ইলেকট্রন (Elektron) বা 'অ্যাম্বার' (পাইন গাছের শক্ত আঠা) হতে। প্রাচীনকালে (অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬৪০-৫৪৮ অব্দে) গ্রিক পণ্ডিত থ্যালেস (Thales) লক্ষ করলেন যে, অ্যাম্বার (Amber) কে রেশমি কাপড় দিয়ে দখলে এটা কাগজের ছোট ছোট টুকরা আকর্ষণ করে। এখন যেমন আমরা অনেকেই লক্ষ করি যে, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে কাগজের ছোট ছোট টুকরার কাছে আনলে চিরুনি টুকরাগুলোকে আকর্ষণ করে। ইদানীং পলিয়েস্টার কাপড়ের শার্ট শরীর হতে খৃষ্যতে গেলে চচট্ শব্দ হয় এবং শার্ট খুলে ফেলার পর শরীরের কাছাকাছি আনলে শরীরের পশম টেনে নেয়, এমনকি অন্ধকারে শার্ট হতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গও বের হতে দেখা যায়; বেশি দেখা যায় শুকনা মৌসুমে, বিশেষ করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। এগুলো আর কিছুই নয়, বিদ্যুতের উপস্থিতির ফলেই এমনটি হয়ে থাকে।
নেগেটিভ এবং পজিটিভ চার্জ (Positive and Negative charge) :স্বাভাবিক অবস্থায় একটি বস্তু নিরপেক্ষ, যেহেতু এটাতে সমান সংখ্যক প্রোটন এবং ইলেকট্রন থাকে, যাতে প্রোটিনসমূহের মোট পজিটিভ চার্জ ইলেকট্রনসমূহের মোট নেগেটিভ চার্জকে নিরপেক্ষ করে তুলে। যদি কোনভাবে এরূপ একটি নিরপেক্ষ বস্তু হতে কিছুসংখ্যক ইলেকট্রনকে সরানো যায়, তবে সেখানে ইলেকট্রনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং বস্তুটি পজিটিভ চার্জযুক্ত হয়।অন্যদিকে যদি নিরপেক্ষ বস্তুটিতে আরো ইলেকট্রন যোগ করা হয়, তবে এতে ইলেকট্রন বাড়তি হয় এবং বস্তুটি নেগেটিভ চার্জযুক্ত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, একটি চার্জযুক্ত বস্তুতে ইলেকট্রন হয় বাড়তি, নয়তো ঘাটতি দেখা দেয়। বিদ্যুৎ দু'ধরনের হয়, যথা :
১। স্থির বিদ্যুৎ বা Static Electricity
২। চলমান বিদ্যুৎ বা Current Electricity.
১। স্থির বিদ্যুৎ (Static Electricity) ও ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট বিদ্যুৎকেই স্থির বিদ্যুৎ বলে। এ বিদ্যুৎ সকল বস্তুতে একই ধরনের। হয় না, একেক বস্তুতে একেক ধরনের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। যেমন ঃ
(ক) রেশমি কাপড়ের সাহায্যে একটা কাচদণ্ডকে ঘষলে এক ধরনের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
আমরা কীভাবে বুঝব যে দু'টিতে দু'ধরনের বিদ্যুতের সৃষ্টি হয়েছে? উপরোক্ত দত্ত দু'টিকে যদি সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে কাছাকাছি আনা যায়, তবে দেখা যাবে যে, দণ্ড দু'টি পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। আবার উপরোক্ত দু'টি দণ্ডকে একই কাপড়ে ঘষে সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে কাছাকাছি আনলে পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে। অতএব, দু'ধরনের বিদ্যুতের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে।
এর এক প্রকারের বিদ্যুৎকে ধনাত্মক বিদ্যুৎ বা Positive Electricity এবং অন্য প্রকারের বিদ্যুৎকে ঋণাত্মক বিদ্যুৎ বা Negative Electricity বলা হয়। এ বিদ্যুৎ যে স্থানে উৎপন্ন হয়, সে স্থানেই রয়ে যায়—কোনক্রমেই উৎপন্ন-স্থান ত্যাগ করে না। তাইতো এর নামকরণ করা হয়েছে স্থির বিদ্যুৎ।
(ক) একমুখী প্রবাহ (Direct Current বা DC)
(খ) পরিবর্তী প্রবাহ (Alternating Current বা AC)
(খ) পরিবর্তী প্রবাহ (Alternating current) : যে কারেন্টের মান ও দিক সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়, তাকে পরিবর্তী প্রবাহ বলে।
বিদ্যুৎ প্রবাহের ফল (Effect of Electric Current) : বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, নিম্নে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত
১।
তাপীয় ফল (Heating Effect) : পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত
হয়, তখন পরিবাহীটি উত্তপ্ত হয়। ফলে বৈদ্যুতিক শক্তির অপচয় ঘটে। এটা
এভাবে বলা যায় যে, বৈদ্যুতিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এটাই
বিদ্যুতের তাপীয় ফল বা Heating effect, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বৈদ্যুতিক
বাতি (বাল্ব) হতে আলোর বিচ্ছুরণ বৈদ্যুতিক হিটার হতে তাপ বিকিরণ এসবই
বিদ্যুতের তাপীয় ফল ।
২। চুম্বকীয় ফল (Magnetic Effect) পরিবাহীর
মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে পরিবাহীর চারদিকে চৌম্বক-ক্ষেত্রের সৃষ্টি
হয়, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শক্তি চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণ ঃ এ
তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক ঘণ্টা, জেনারেটর, মোটর, ইত্যাদি চালানো হয়।
৩।
রাসায়নিক ফল (Chemical Effect) ঃ যদি কোন যৌগিক পদার্থের দ্রবণে বিদ্যুৎ
প্রবাহিত করানো হয়, তবে উক্ত দ্রবণটি বিশ্লিষ্ট হয়। এ বিশ্লেষণকে
বৈদ্যুতিক বিশ্লেষণ বা Electrolysis বলে। অম্লমিশ্রিত পানিতে বিদ্যুৎ
প্রবাহিত করালে উষ্ণ পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে বিশ্লিষ্ট হয়। অর্থাৎ
বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা
যায়,ইলেকট্রোপ্লেটিং (Electroplating) এ ক্রিয়ার ফল।